সমস্ত লেখাগুলি

কিছু রাজনৈতিক কথা -
বিতান সানা
Nov. 23, 2024 | সামাজিক ইস্যু | views:295 | likes:2 | share: 2 | comments:0

Bhakti in religion may be a road to the salvation of the soul. But in politics, Bhakti or hero-worship is a sure road to degradation and to eventual dictatorship.

বি আর আম্বেদকর Constituent Assembly এর শেষ দিন অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ২৫ শে নভেম্বর তাঁর বক্তৃতায় মধ্যে এই কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু, প্রশ্ন হলো, কেন বলেছিলেন?

আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি। কংগ্রেসের একটা বিক্ষুব্ধ অংশ যারা মূলত রাজনীতিকে ইনকাম করার রাস্তা হিসেবে দেখতো, তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি বিজেপি আর আরএসএসের সহায়তায় তৃণমূল কংগ্রেস নামের একটা রাজনৈতিক দল গঠন করে। পরের বছরই ১৯৯৯ সালেই তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অণুপ্রেরণায় বিজেপির এনডিএর শরীক হয়েছিলো। এরপর ২০০৩ সালের আরএসএসের একটি অনুষ্ঠানে তারাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'দুর্গা' বলে অভিহিত করেন। মমতা প্রত্যুত্তরে জানান তাদের সাহায্য পেলে তিনি রাজ্য থেকে সিপিআইএমকে তাড়াতে পারবেন। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে তৃণমূল কংগ্রেস কাদের সহায়তার দল গড়েছিলো। 

এবার কথা হলো এই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নীতি-আদর্শ আসলে কী ছিলো? আদৌ ছিলো কী? আজ্ঞে না। এটি একজন কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল, দিল্লি-পাঞ্জাবের আপ পার্টির মতো।

 এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেন সেটাই শেষ কথা। দলের ক্ষেত্রেও তাই, সরকারের ক্ষেত্রেও তাই। কেন, আমরা দেখিনি শিক্ষাবিষয়ক নানান ঘোষণা তিনি করছেন? এই দলের একটাই নীতি ছিলো। সেটা সিপিআইএম বিরোধিতা। এটা কোনো কথা বলুন? একটা দলের নীতি যখন শুধু সিপিআইএম তাড়ানো তাহলে বাংলার মানুষ কিভাবে এই দলকে বা দলের নেত্রীকে বিশ্বাস করলেন? বাংলার জনগণ একটুও জানতে চাইলেন না এই দল ক্ষমতায় আসলে কী নীতিতে রাজ্যের অর্থনীতি চালাবে? পলিসি ঠিক কী হবে? এই দলের ন্যাশনাল ইস্যুতে স্ট্যান্ড কী? দলের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড কী? লেফ্ট না রাইট? নাকি সেন্টার? আমরা কেউ জানিনা। তারাও জানাননি আজ অব্দি কারন বাংলার মানুষের সে’সবে যায় আসে না। এই রাজ্যে বা এই দেশে মুখ দেখে ভোট হয়। সেই মুখ খুব ভালো বিরোধী নেতা বা নেত্রী হতেই পারেন।

কিন্তু, তিনি যে ভালো মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হতে নাও পারেন সেটা এই রাজ্যের বা এই দেশের মানুষ ঠিক মানতে চান না।

 সবাই মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। রাজ্যের হাল দেখেছেন নিশ্চয়ই। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার রাজনীতির জন্মলগ্ন থেকেই বুঝে গেছিলেন যে মিথ্যে কথা বারবার বললে সেটা একসময় সত্যি মনে হয়। নিশ্চয়ই হিটলারের ডানহাত গোয়বেলসের থেকে শিখেছিলেন এটা। তিনি মানুষকে এটা বোঝাতে পেরেছিলেন যে সিপিআইএম খারাপ, তৃণমূল কংগ্রেস ভালো। এর চেয়েও বড়ো কথা তিনি বোঝাতে পেরেছিলেন তিনি একজন সৎ নেত্রী। তার স্লোগান থাকতো মা মাটি মানুষ। ভুয়ো ডক্টরেট ডিগ্রি হোক বা নামের আগে কুমারী বসানো, মানুষ সবই দেখেছে, ভুলেও গেছে। কোনো প্রশ্ন করেনি। সিঙ্গুর বলুন বা নন্দীগ্রাম! তিনি এই দুটো জায়গায় সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সিপিআইএম আসলে কৃষকবিরোধী। কিন্তু, তিনি কৃষকদের পক্ষে। মানুষ এটা বিশ্বাস করেছিলেন। বিশ্বাস করবে নাই কেন? ২০১৬ সালে সিঙ্গুরের চাষের অযোগ্য জমি কৃষকদের হাতে পুনরায় ফেরত দিয়েছিলেন। তার সেই দক্ষতা ছিলো। পরবর্তীকালে দীপক ঘোষের বইগুলো পড়েই আমরা আসল তথ্যগুলো জানতে পেরেছি। তার মিথ্যেকথা বলা শুরু তার জন্মসাল থেকেই। যাইহোক, সেদিকে আর যাচ্ছিনা।


আপনাদের সবার মনে থাকবে, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষকে এটাই বলেছিলেন যে তাকে দেখেই যেন ভোট দেয় বাংলার মানুষ। ২৯৪ টি আসনে তিনিই প্রার্থী। বাংলার মানুষ সেটা বিশ্বাস করেছিলেন। কারন তারা তখনও মনে করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুবই সৎ এবং মানবিক একজন মুখ্যমন্ত্রী। আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে ১৯৯৮ এর পর থেকে ২০১১ এবং তারপর 

২০১১ থেকে ২০২২ এর নানান ঘটনাগুলো দেখেন, আপনি বুঝবেন যে রাজনীতিতে একজনকে অন্ধভক্তি করলে ঠিক কী পর্যায়ে ক্ষতি হতে পারে।

 যেমন ধরুন তৃণমূল কংগ্রেস বাইরে বিজেপি বিরোধিতা করলেও, লোকসভার ভেতর বিগত ১১ বছরে বিজেপির আনা বিলগুলির বিপক্ষে একটিবারও ভোট দেয়নি। হয় পক্ষে ভোট দিয়েছে বা বিরত থেকেছে। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালো করেই জানেন যে বাইরে বিরোধিতা করলে আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে 'ক্যা ক্যা ছি ছি' করলেই বাংলার জনগণ বলবে, 'দেখেছো, আমাদের নেত্রী সিএএ এর বিরোধিতা করছে'। কিন্তু, লোকসভায় যে সেই বিলের বিপক্ষে তৃণমূলের ২২জন এমপি ভোট না দিয়ে বিরত থাকলেন, সেটা খুব একটা সাধারণ মানুষ জানতে পারলেন না। এটাই ম্যাজিক। এই রাজ্যের মিডিয়া সেটাই ফলাও করে দেখাবে যেটা এই রাজ্যে হচ্ছে কিন্তু, ন্যাশনাল ইস্যুতে তাদের অবস্থান অতটা মিডিয়া দেখাবে না, প্রিন্ট মিডিয়া দেখালেও রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ খবরের কাগজ পড়েন না। পড়লেও সব খবর পড়েন না। আর এইভাবেই অন্ধভক্তি দ্বিচারিতাকেও হার মানিয়ে দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস একটা রাজনৈতিক দল তো বটেই, কিন্তু এদের কোনো রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ নেই, এরা মূলত 'পপুলিজম' নামক একটি নীতিতে বিশ্বাসী যার অর্থ মানুষকে নানান স্কিমের মাধ্যমে শুধু বিলিয়ে যাও, কোষাগারের টাকা অবাধে খরচ করো। এই নীতি অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, দিল্লি সরকারও অনুসরণ করে। এরা সবাই রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নীতিহীন দল। এগুলো করার কারন যাতে তারা মূল ইস্যু নিয়ে মাথা না ঘামায়। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প এরমই একটি 'পপুলিস্টিক' নীতির নিকৃষ্ট উদাহরণ। এর ফলে গ্রামবাংলার লাখ লাখ মহিলারা অন্ধভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রীকে ভোট দিয়ে থাকেন, তাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেন। ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে গ্রামে গ্রামে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রাতের বেলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বুঝিয়েও এসেছিলেন পুনরায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় না আনলে, লক্ষ্মীভান্ডারে টাকা পাবেন না তারা। অগত্যা!


২০১১ থেকে ধারাবাহিকভাবে গোটা রাজ্যে সবকিছু নীল সাদা রঙে মুড়ে দেওয়া, ঝাঁ চকচকে করে দেওয়াটাও এর অংশ। এর ফলে মানুষ এটা দেখতে চাইবেন না যে ভেতরে কী আছে, এটা কতটা টেকসই, বা এটা আসলে কে তৈরি করেছে আর কে নতুন রং করে নিজের নামে চালাচ্ছে? বাইরের সৌন্দর্য দেখেই তারা ভাববেন এটাই উন্নয়ন। আপনিই বলুন বাড়িঘরের বাইরে রং করলে, সেটাকে পরিষ্কার রাখলে দেখতে ভালো লাগেনা? রঙিন-উজ্জ্বল কিছুতে আমাদের চোখ আটকে যায়। 

যেমন ধরুন, সরকারি হাসপাতাল। সেটাকে ভালো করে রং করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলেই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষ এটাতেই খুশি।

 তারা জানতে চাইবেন না সেখানে কী কী সরঞ্জাম আছে, কতজন এমডি ডাক্তার আছেন, এমার্জেন্সিতে কতজন থাকেন, কতজন ট্রেইন্ড নার্স আছেন, বেড কতগুলো আছে, দরকারে বেড পাওয়া যাবে কিনা? অনেকটা তৃণমূলের নেতারা যেইভাবে উডবার্ন ওয়ার্ডে বেড পান। হাসপাতালে নানান অপারেশনের সুবিধে কতটা আছে, রেফার করার প্রবণতা নেই তো? ওষুধের সহজলোভ্যতা কতটা আছে, কোনো সিন্ডিকেট চলছে কিনা ইত্যাদি। কারন এগুলো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। কী বলেন? যেমন ধরুন, সল্টলেক স্টেডিয়াম। ১৯৮৪ সালে তৈরি করলো বামফ্রন্ট সরকার, কিন্তু, ২০১৭ সালে অনুর্দ্ধ ১৭ পুরুষ ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য সেটাকে পুনঃসংস্কার করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করে নিজের নামে সেখানে ফলক বসিয়ে দিয়েছেন। কেউ প্রশ্ন করেছে? দুয়ারে রেশন এরমই আরও একটি উদাহরণ। রেশন নেওয়া সাধারণ মানুষ জানতেও পারছেন না এই দুয়ারে বা বলা ভালো পাড়ার মোড়ে/ ক্লাবের সামনে রেশন দেওয়ার ফলে সরকারের অতিরিক্ত কত টাকা খরচ হচ্ছে যা আমাদের করের টাকা। তারা ভাবছেন তারা সুবিধে পাচ্ছেন, এই সরকার মমতাময়ী, মানবিক কিন্তু রেশনের দোকানে নিজেরা গেলে সরকারের কত টাকা সাশ্রয় হতো সেটা তারা জানেনও না। 


এখানে বলে রাখা ভালো যে হাইকোর্ট এটাকে বেআইনি বললেও খাদ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ অফিসারদের ধমকের চোটে রেশন ডিলাররা এখনও এই বেআইনি প্রকল্পটি চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। একইভাবে সরকারের করের টাকায় প্রায় প্রতিদিন সমস্ত প্রিন্ট মিডিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন করাটাও এর অংশ। কেউ প্রশ্ন করেননা যে কেন এত ফালতু টাকা খরচ করা হচ্ছে? রাস্তার গর্তগুলো অন্ততঃ এই টাকায় ভরাট করা যেত। কিছুদিন আগে তৃণমূলেরই এক নেতার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা গেলন। কিন্তু, ওই যে সাধারণ মানুষ মনে করেন দুর্ঘটনা তো ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই সরকারের এক্ষেত্রে কোনো দায় নেই। রাজনীতিতে একজনের প্রতি অন্ধভক্তি আসলে সত্যিই সবকিছু ভুলিয়ে রাখে। প্রশ্ন করতেই শেখায় না। আপনি সেই দলে নেই তো?

তথ্যসূত্র:

Anandabazar Patrika 

The Print

The Hindu

The Tribune

ছেলেদের অগ্রাধিকার -
বিতান সানা
Nov. 18, 2024 | নারীবাদ | views:818 | likes:2 | share: 2 | comments:0

আমাদের দেশ বা তার আশেপাশের দেশ যেরম বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ইত্যাদি দেশে বিয়ের রীতিনীতি গুলো প্রায় একই। অর্থাৎ, বিয়ের পর মেয়েকে তার বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে হয়। খেয়াল করলে দেখবেন এই বাপেরবাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি শব্দদুটোর মধ্যেও কেমন পুরুষদের সম্পত্তি-অধিকারের ব্যাপারটা ফুঁটে ওঠে। অর্থাৎ, নারীদের নিজের বাড়ির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। বিয়ের আগে বাপের, বিয়ের পর স্বামীর বা শ্বশুরের। আমরা যদি পদবীর দিকটাও দেখি সেক্ষেত্রেও দেখবো বাবার সূত্রে পাওয়া পদবী বিয়ের পর পাল্টে স্বামীর সূত্রে পাওয়া পদবী হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, ব্যক্তিত্ত্ব বা আইডেন্টিটি বলে মেয়েদের আসলেই কিছু নেই। সমাজ এখন আগের চেয়ে অনেকটাই প্রগতিশীল। তবে সেটা মূলত বড়ো বড়ো শহর ও শহর সংলগ্ন অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ।

অনেকেই বলতে পারেন যে ছেলেরাও তো ঘরজামাই থাকে। অবশ্যই থাকে। তবে সেটা গোটা পুরুষসমাজের ঠিক কত অংশ বা যেই পুরুষরা মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করেন তারা কি আদৌ ঘর জামাই থাকেন? তারা কি এই ঘরজামাই থাকাকে অপমান হিসেবে দেখেন না? আশা করি আপনিও উত্তরটা জানেন।

ছোটবেলা থেকে যে বাবা মায়ের আদরে মেয়ে বড়ো হলো, যে পরিবেশে সে অভ্যস্ত, কম্ফোর্টেবল, যে বাড়ির প্রতি তার একটা মায়া রয়েছে, সেই সবকিছু ছেড়ে তাকে সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা একটা পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে হয়। নতুন বাড়ি, নতুন সংসার। প্রধানত ছেলেদের এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়না। বিয়ের পর মেয়েরা যখন তার স্বামীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যায় অর্থাৎ, জামাই যখন তার শ্বশুরবাড়ি যায়, জামাই সেখানে যে আদরটা পায়, তাকে আপ্যায়ন করার যে ইলাহী আয়োজন করা হয় সেটা কি মেয়েরা বিয়ের পর তার শ্বশুরবাড়িতে পায়? ভেবে দেখুন তো। ছেলেরা বা মেয়েরা বাড়িতে যেই পরিবেশে বেড়ে ওঠে, বিয়ের পর ছেলেদের সেই জীবনের খুব একটা হেরফের নাহলেও মেয়েদের জীবন অনেকটা পরিবর্তন হয়ে যায়।

যদি একটি ছেলে আর মেয়ে আত্মনির্ভর হয়ে বিয়ে করে, তবে বিয়ের পর সেই ছেলেটা সংসারে যতটা না কন্ট্রিবিউট করে থাকে, তার চেয়ে অনেক বেশি কন্ট্রিবিউট করে থাকে মেয়েরা। তাকে বাইরের সাথে বাড়ির প্রায় সবকিছুই সামলাতে হয়। সমাজের এই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা গুলো আজও সমানভাবে বয়ে চলেছে আমাদের মানসিকতার মধ্যে দিয়ে। গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট এমনকি পিএচডি হোল্ডার ছেলেরাও এই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা থেকে বেরোতে পারেনি। আজও প্রায় সব মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেদের অন্যভাবে ও মেয়েদের অন্যভাবে মানুষ করা হয়। বাড়িতে ছেলেদের মূলত শেখানো হয় তাদের কাজ একটাই। অর্থ উপার্জন। বাড়িতে মেয়েদের এটা শিখিয়ে দেওয়া হয় তাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ বরাদ্দ করেছে এই সমাজ। যেমন ঘরমোছা, জামাকাপড় কাচা, জামাকাপড় ইস্ত্রি করা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও ফিটফাট রাখা, রান্নাবান্না করা, বাসন মাজা এবং বিয়ের পর স্বামীর হুকুমের তামিল করা। বাড়ির বউ এইসবকিছু ঠিকঠাক ভাবে করলেই সে একজন ভালো বৌমা, ভালো স্ত্রী হতে পারবে। শ্বশুর শাশুড়ির বা স্বামীর প্রশংসা পেতে তাকে সব কাজেই নিপুণ হতে হবে। মফস্বলে বা পল্লীর দিকে গেলে এখনও এটাই মুখে মুখে ফেরে মানুষের। সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। এইখানে এই গুণের কথাই বলা হয়েছে। মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজে অর্থ উপার্জন করাটা গুণ নয়। তাইতো হিন্দুরীতিতে বিয়ের পর পাত্রকে বলতে হয় “আমি আমার স্ত্রীর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম।”কথাটা কতটা পুরুষতান্ত্রিক আর নারীসমাজকে অপমান করছে এটা কজন ভেবে দেখেছেন? কিভাবে নারীসমাজকে শোষণ করা যায়, তাদের সাথে দাসীর মতো আচরণ করা যায় তার পুরো বন্দোবস্ত করে গেছে একটা বড়ো অংশের ব্রাহ্মণবাদী মানুষ। সমাজের মধ্যে এখনও একটা অংশের মানুষ নিজের ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজতে গিয়ে পড়াশুনা জানা, শিক্ষিতা কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট নয় এরম পাত্রী খোঁজেন। কারণ এরম পাত্রীদের শোষণ করা সহজ। তাকে দিয়ে বাড়ির প্রায় সব কাজ করানো যায়। সেই ছেলের বাড়ি এটাই চায় স্বামী, শ্বশুরশাশুড়ির সেবা করা বা বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করাই সেই মেয়েটার জীবনের মূল লক্ষ্য হবে।

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এই চিন্তভাবনা থেকে আজ আমরা পুরোপুরিভাবে সবাই বেরিয়ে আসতে পারিনি। শহরঅঞ্চলে এখনও এই প্র্যাকটিস হয়ে চলেছে। আগামী ৫০-১০০ বছরেও সম্পূর্ণভাবে এই প্রাকটিস বন্ধ হবে কিনা, জানিনা। যেই পরিবারে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে অথবা, যেই পরিবারে ছেলে আর তার বিবাহিত বউ আছে, সেই বাড়িতে কোনো না কোনোভাবে মেয়েরা শোষিত হচ্ছে। ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর সেটা এখনও হচ্ছে। একটি মেয়ে যদি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নিজের বাড়ির মতোই আদর যত্ন পাওয়ার আশা করে, স্বপ্ন দেখে সেখানে ভুল কোথায়? একটি ছেলে তার শাশুড়িমার কাছ থেকে যে আদরটা পায়, সেই একই আদরযত্ন কি মেয়েটা তার শাশুড়িমার কাছ থেকে প্রত্যাশা করতে পারেনা?

রেড ভলান্টিয়ার্স -
বিতান সানা
Nov. 16, 2024 | সামাজিক ইস্যু | views:496 | likes:5 | share: 5 | comments:0

এই তো সেদিন। সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরে স্নান সেরে বই নিয়ে বসেছি। সারাদিন একটুও বইমুখো হইনি। হইনি বলাটা ভুল হবে। হওয়ার সুযোগ হয়নি।

পড়তে পড়তে কখন রাত সাড়ে ১১টা বেজে গেছে খেয়াল নেই। হুশ ফিরলো একটা ফোনে। অচেনা নম্বর। গত ১ মাসে এরম বহু অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছে। তাই বেশি না ভেবেই রিসিভ করলাম। 


রেড ভল্যান্টিয়ার্স?

হ্যাঁ বলছি।

আমি উৎপল সেনগুপ্ত। নবপল্লী ভদ্রবাড়ি থেকে বলছিলাম।

হ্যাঁ বলুন। আপনাকে কী সাহায্য করতে পারি?

দাদা, আমার মায়ের স্যাচুরেশন লেভেল অনেকটা নেমে গেছে। ৮০ চলছে। একটা Oxygen সিলিন্ডারের জোগাড় করে দিতে পারেন?

ঠিক আছে। আমরা ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছচ্ছি। আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।


ফোনটা রেখেই কোনরকমে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। বেরোনোর আগে ফোন করলাম আমাদেরই আরেক রেডভল্যান্টিয়ারকে। বাবু বিশ্বাস। আমাদের পাড়াতেই থাকে। বয়সে আমার চেয়ে বড়ো। আমি তাকে দাদা বলেই ডাকি। ও আমাকে নানান বিষয়ে গাইড করে। যাইহোক, অফিস থেকে সিলিন্ডারটা বের করেই দুজনে রওনা হলাম। উৎপলবাবু বাড়ির বাইরেই দাঁড়িয়েছিলেন, সম্ভবত পায়চারী করছিলেন। আমাদের আসতে দেখে মনে হলো একটু দুশ্চিন্তামুক্ত হলেন। অক্সিমিটারে যখন তার মায়ের স্যাচুরেশন লেভেলটা চেক করলাম, সেটা ৭৮-৭৯ এ আপডাউন করছে। তড়িঘড়ি সিলিন্ডার সেট করে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হলো। কিছুক্ষণ বাদে স্যাচুরেশন লেভেল বেড়ে দাঁড়ালো ৮৪-৮৫। উৎপলবাবুকে বললাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি পড়লে যেন নিঃসংকোচে জানান। মনে হলো উনি আমাদের ভরসা করলেন। আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় জানালেন। সেদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১টা বেজে গেছিলো। পরেরদিন উৎপলবাবু নিজে থেকেই ফোন করে জানালেন ওনার মা এখন সুস্থ। শ্বাসকষ্ট আর হচ্ছেনা। অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯০-৯১ দেখাচ্ছে। 

গত ১ মাসে শয়ে শয়ে এরম ফোন কল রিসিভ করেছি। তাদের প্রায় অধিকাংশই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চেষ্টা করলেও সবাইকে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারিনি আমরা। ফোনেই বলতে বাধ্য হয়েছি। সরি। কারণ চাহিদামতো অক্সিজেনের যোগান সেদিন ছিলোনা। তাই অকালে চোখের সামনে অক্সিজেন না পেয়ে মারাও যেতে দেখেছি বহু মানুষকে। এপ্রিলের শেষদিকে আমাদেরই এক রেডভল্যান্টিয়ারের বাবা অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেছেন। আবার এরমও হয়েছে যে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার পরেও স্যাচুরেশন লেভেল বাড়েনি, কমতে কমতে দম কেড়ে নিয়েছে রোগীর। বর্তমানে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। বারাসাতে অক্সিজেনের যোগান এখন কমবেশি আছে। তবে রক্তের আকালটা এখনো মেটেনি। গত ১ মাসে অনেককেই রেডভল্যান্টিয়ার্স রক্তের ব্যবস্থা করে দিলেও রক্তের জন্য রোগীর পরিবারকে এখনও এদিক থেকে সেদিক ছুটতে হচ্ছে। বারাসাত হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে গিয়েও রোগীর আত্মীয় রক্ত পাচ্ছেন না। ফোন করছেন আমাদের। আমাদের রেডভল্যান্টিয়ার্সরাই ছুটে যাচ্ছে রক্ত দিতে। আজ যখন এই প্রবন্ধটি লিখছি সেই মুহূর্তেও রোগীর আত্মীয় কোথাও রক্ত না পেয়ে রেডভল্যান্টিয়ার্সের কাছে A নেগেটিভ দু ইউনিট রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করছেন।

খাবার পৌঁছে দেওয়া, ওষুধ কিনে দেওয়া বা কারও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা ; গত ১ মাসে সবকিছুই করার চেষ্টা করেছি আমরা। এখনও করছি। তবে সবটা পেরে উঠিনি। গত ১ মাসের হিসেব করলে মোট বারাসাতবাসীর নিরিখে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা বেশি। তাও আমরা চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করতে তো আর ক্ষতি নেই।

প্রাইভেট টিউশন -
বিতান সানা
Nov. 13, 2024 | সামাজিক ইস্যু | views:618 | likes:55 | share: 4 | comments:0

দীর্ঘদিনের হাজারো অভিযোগ, হাজারো নীতি-নির্দেশিকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির স্কুলশিক্ষকের প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করা যায়নি। করোনা অতিমারিতেও কেউ কেউ অনলাইনে পড়িয়েছেন। লকডাউন উঠলে ফিরে গেছেন সেই পুরোনো অভ্যেসে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আচরণবিধিতেই বলা আছে, স্কুলশিক্ষক-শিক্ষিকারা টিউশন করতে পারবেন না। কিন্তু সেই বিধি আছে বিধিতেই! গত ২-৩ বছরে নানান পত্রপত্রিকায় এই নিয়ে নানান প্রতিবেদন বেরিয়েছে। নানান প্রাইভেট শিক্ষক সংগঠন এই বিধিভঙ্গের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করেছেন। সেই স্কুল শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করা হলে কেউ বলেছেন তিনি এসব করেন না, বা কেউ বলেছেন আগে করতেন এখন ছেড়ে দিয়েছেন। আসলে এখনও তারা স্বমহিমায় টিউশন করিয়ে চলেছেন। নানান প্রাইভেট শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষকরা সেই অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষকদের তালিকাও তুলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে। উপরিমহল থেকে সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ফল শূন্য। আসলে কেউই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখতে চাননা। প্রাইভেট শিক্ষক সংগঠন বলতে সেই শিক্ষকদের বোঝাচ্ছি যারা কোনো স্কুল বা কলেজের সাথে যুক্ত নন, কেবল টিউশন করিয়েই যাদের সংসার চলে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, বারবার শিক্ষক শব্দটা ব্যবহার করছি কারণ প্রাইভেট টিউশনটা মূলত শিক্ষকরাই করে থাকেন। শিক্ষিকারা নন।

দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্যবসা চলছে। বাম আমলেও এর রমরমা ছিলো, তৃণমূলের আমলেও কোনো পরিবর্তন নেই। আমার ধারণা আগামীতে যে সরকারই আসুক না কেন, এর পরিবর্তন হওয়ার নয়। আমি বারাসাত প্যারিচরণ সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। একসময় আমিও এই ব্যবসার অংশ ছিলাম। ব্যবসা বলছি কারণ যেই শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য তারা সরকারের কাছ থেকে বেতন পান, সেই শিক্ষাটার কিছু অংশ তারা স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে থাকেন আর স্কুলের বাইরে টাকার মাধ্যমে আসল শিক্ষাটা তারা প্রাইভেট টিউশনে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে থাকেন। আমাদের সময় কেউ কেউ পরীক্ষার প্রশ্নও বিলিয়ে দিতেন। স্কুলের ইউনিট টেস্টের বা ফাইনাল এক্সামের আগে প্রাইভেট টিউশনে যে প্রশ্নের ওপর পরীক্ষা নিতেন, হুবহু অনেক প্রশ্নই স্কুলের পরীক্ষায় চলে আসতো। এটা তখনই ঘটতো যখন সেই শিক্ষকই স্কুলের প্রশ্নপত্র তৈরি করতেন। এই কারণে অনেক ছাত্ররাই নির্দিষ্ট শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যেত। ছাত্রদের মা বাবাও চাইতেন তাদের ছেলে ভালো মার্কস পাক। আমার মা বাবার ক্ষেত্রেও এর বদল ঘটেনি, বাবা না চাইলেও মা প্রাইভেট টিউশনের পক্ষপাতী ছিলেন। আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষকরাই স্কুলের শেষে নানান ছাত্রের বাড়িতে প্রাইভেট টিউশন পড়াতেন। কেউ কেউ আবার নিজের বাড়িতেই প্রাইভেট টিউশন সেন্টার খুলে পড়াতেন। ২০১৪ এর দিকে নবম-দশম শ্রেণীর সপ্তাহে একদিন করে টিউশন থাকতো। মাসের রেটটা ছিল এরম: বাংলা ২০০-২৫০ টাকা, ইংরেজী ২৫০-৩০০ টাকা, বিজ্ঞানের প্রতিটা বিষয় ২৫০ টাকা, ইতিহাস ২০০-২৫০ টাকা, ভূগোল ২৫০ টাকা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের পড়া থাকতো সপ্তাহে দুদিন। রেটটা ছিলো বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটা বিষয় ৬০০-৮০০ টাকা, ইংরেজি- বাংলা ৪০০ টাকা। ইঞ্জিনিয়ারিং জয়েন্টের জন্য মাসের রেট ছিলো ১০০০-১২০০ টাকা। প্রাইভেট টিউশন পড়তে গিয়ে আমরা বন্ধুরা মিলে হিসেব করে দেখতাম একজন শিক্ষক মাসে কুড়ি-ত্রিশ হাজার বা কেউ কেউ চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছেন। কারণ তাদের অনেকেই অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রাইভেট টিউশন পড়াতেন। প্রতিটা ক্লাসের অন্ততপক্ষে ২-৩টে ব্যাচ থাকতো।

স্কুলের প্রতিটা ক্লাস হতো ৪০ মিনিট করে, একজন শিক্ষক পড়িয়ে যাওয়ার পর আরেকজনের রুমে আসতে ৫-১০ মিনিট সময় লাগতো। ৩০-৩৫ মিনিটে আসলে সেইভাবে পড়া না হলেও, এমন অনেক শিক্ষকই ছিলেন যারা আন্তরিকতার সাথে ওই সময়টুকু পড়াতেন এবং তারা বাইরে প্রাইভেট টিউশনিও করতেন না।

কিছুদিন আগে আমার পাড়াত এক ভাইকে তার স্কুলের পড়া দেখাতে গিয়ে, আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়। সেদিন বুঝেতে পারি ওর স্কুলে আসলে পড়াশুনাটাই ঠিকমতো হয়না। বাংলা অক্ষরই সে ঠিকমতো চেনেনা। সহজ বাংলা রিডিং পড়তেই সে হিমশিম খাচ্ছে। বারাসাতেরই একটি বাংলা মিডিয়ামের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র সে। ওর সাথে কথা বলে জেনেছিলাম ওই ক্লাসে ওর মতো ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনেক। কেবল গোনাকয়েক ছাত্রছাত্রীই প্রাইভেট টিউশনের দৌলতে ক্লাসে ভালো পারফর্ম করছে। আর্থিকভাবে সবল না হওয়ায় ওর সেই সুযোগটা হয়নি। তাই ক্লাস নাইনে এসেও বাংলা রিডিং পড়তেই সে হিমশিম খাচ্ছে।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলোর প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীরাই প্রাইভেট টিউশন পড়তে যায়। তারাও জানে স্কুলে ঠিকমতো পড়ানো হয়না, আর সেটার ওপর ভরসা করে থাকলে পরীক্ষায় ভালো মার্কস পাওয়া মুশকিল। ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মাও তাই প্রাইভেট টিউশনিতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে দেন, কেবল মার্কসের লোভে পড়ে। শেষমেশ পরীক্ষায় নাম্বারটিই গুরুত্বপূর্ণ কিনা। কলেজের ক্ষেত্রেও তাই। নন-টেকনিক্যাল কলেজে সকল ছেলেমেয়েরাই প্রাইভেট টিউশন পড়ে। টিউশনের আশপাশের জেরক্সের দোকানে গেলেই নোটসএর ফটোকপির বান্ডিল দেখতে পাওয়া যায়। এমন কি যারা প্রাইভেট টিউশন পড়ান, তাদের মধ্যে অনেকেই নানান কলেজে বর্তমানে প্রফেসর পদে রয়েছেন। সরকারের বেতনও নিচ্ছেন, এদিকে বাইরে টাকার বিনিময়ে ছেলেমেয়েদের নোটসও বিলি করছেন।

বর্তমানে প্রাইভেট টিউশন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, অনেকের ধারণা প্রাইভেট টিউশন না পড়লে আসল শিক্ষা লাভ হয়না। স্কুল-কলেজের তেমন গুরুত্ব নেই। সরকার বা প্রাইভেট সংস্থার স্কুল/কলেজ তৈরি করার কোনো প্রয়োজন নেই আসলে। স্কুল-কলেজ বর্তমানে শিক্ষার পরিবর্তে কেবল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টকার্ড আর ডিগ্রি সার্টিফিকেট নেওয়ার স্থান হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদিও প্রান্তিক ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল এখনো গুরুত্বপূর্ণ একটা স্থান কারণ পয়সা খরচ করে শিক্ষা নেওয়াটা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমার মনে হয় সরকারের নিজ উদ্যোগে প্রাইভেট কিছু টিউশন সেন্টার খুলে দেওয়া উচিৎ। ছেলেমেয়েদের আর কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা সেন্টারে গিয়ে টাকার বিনিময়ে আসল শিক্ষাটা নেবে। যাদের সেই অর্থটা নেই তারা শিক্ষাটা নেবেনা। সরকারও এটাই চায়। টাকা না থাকলে কিসের শিক্ষা? বেশিরভাগ শিক্ষকরা এই 'অর্থ যার, শিক্ষা তার' পরিবেশটাই তৈরি করেছেন। সেই শিক্ষকেরা যারা স্কুলে বা কলেজে শিক্ষকের বা প্রফেসরের দায়িত্বে থেকেও বাইরে প্রাইভেট টিউশন করে এক্সট্রা রোজগার করেন, তাদের বেতন না দিয়ে সরকারের একেবারে ছাত্রছাত্রীদের হাতেই টিউশনের টাকাটা তুলে দেওয়া উচিৎ। তারাই টিউশন পড়ার পর মাস শেষে সেই শিক্ষকদের টিউশনের টাকাটা বেতন হিসেবে তুলে দেবে।

স্কুলে ছাত্রহিসেবে আমরা অনেকেই এই ব্যবসার অংশ ছিলাম, কিন্তু, এরমটা চলতে থাকলে আগামীর প্রজন্ম এটাই শিখবে যে স্কুলে/কলেজ পড়াশুনা করার জায়গা নয়, কেবল গিয়ে হাজিরা দেওয়ার জায়গা। সরকার যদি বাজেটে শিক্ষাখাতে আরও বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চপ্রাথমিক, হাইস্কুলের শিক্ষার পরিকাঠামো আরও ভালো করে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের মধ্যেই উচ্চমানের শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতো, তাদের প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়তো না। আজকাল আমরা অনেকেই ইউটিউবের নানান চ্যানেলে বিনামূল্যে আধুনিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকি। ছাত্রছাত্রীদেরকেও যদি সেই কায়দায় স্কুলে পড়ানো যেত, তাদের স্মৃতিতে আরো ভালোভাবে সেই বিষয়গুলো গেঁথে যেত বলে আমার মনে হয়। প্রাইভেট টিউশন পড়ার কোনো প্রয়োজন পড়তোনা। এছাড়া কলেজের ক্ষেত্রেও সিলেবাসে পরিবর্তন আনা বা এরম পরিকাঠামো বানানো দরকার যাতে কোনো ছাত্রছাত্রীকেই প্রাইভেট টিউশন না পড়তে হয়। স্কুল বা কলেজই হয়ে উঠবে প্রথাগত শিক্ষাগ্রহণের একমাত্র স্থান। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে এরম একটা দিন আসবেই।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929